ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

আলোচিত মা-মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায়

চকরিয়ায় হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা

চকরিয়া থানায় উপস্থিত হন নির্যাতিত পারভীন আক্তার, পাশে তাঁর দুই মেয়ে সেলিনা আক্তার ও রোজিনা আক্তার

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের আলোচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. মিরানুল ইসলাম মিরানের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে চকরিয়া থানায়। মঙ্গলবার ২৫ আগস্ট বিকাল পাঁচটার দিকে নির্যাতিত পারভীন আক্তার চকরিয়া থানায় উপস্থিত হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান মিরান ছাড়াও ইতোমধ্যে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া তিনজনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে।

আসামীরা হলেন উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.মিরানুল ইসলাম, হারবাং বৃন্দাবনখিল এলাকার জিয়াবুল হকের ছেলে নাছির উদ্দিন (২৮), মাষ্টার মাহমুদুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম (১৯) ও এমরান হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩২)। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়েছে আরো ২০-৩০জনকে। ভুক্তভোগী বাদিকে মামলায় আইনী সহায়তা দিচ্ছেন ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস্ কমিশন।

মামলার এজাহারে বাদি পারভীন আক্তার দাবি করেন, ২১ আগষ্ট শুক্রবার একটি সিএনজি নিয়ে আমি আমার দুই মেয়ে সেলিনা আক্তার, রোজিনা আক্তার ও ছেলে এমরান এবং তাঁর বন্ধু ছুট্টুসহ চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারাস্থ পূর্ব হাইদারনাশির আমার ছোট মেয়ের শ^শুড়বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলাম।

আমাদের বহনকারি সিএনজিটি হারবাং বৃন্দাবনখিল লালব্রীজ এলাকায় পৌছলে পিছন থেকে দুটি মোটর সাইকেলে মোট ছয়জন লোক আমাদের পিছু নেয়। পরে আমাদের গাড়ির চালক ভয় পেয়ে হারবাং স্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে চলতে শুরু করে। এক পর্যায়ে মোটরসাইকেল আরোহী ছয়জনসহ আরো বেশ লোকজন আমাদের সিএনজিটি আটকে ফেলে।

এজাহারে আরো দাবি করেন, আমাদের শোর চিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে আসে। ইতোমধ্যে ধাওয়া করা লোকজন গরু চুরির অপবাদ দিয়ে আমাদের মারধর শুরু করে। এসময় আসামীরা আমাদের কাছে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও গলার চেইন এবং চারটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

পরে স্থানীয় লোকজনসহ আসামীরা আমাদের কোমড়ে রশি দিয়ে বেঁধে টেনে টেনে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। ওখানে নিয়ে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম দ্বিতীয় দফায় আবারও আমাদের অকথ্যা ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে প্রথমে চেয়ার দিয়ে এবং পরে একটি লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।

বাদি দাতি তুলেছেন, এজাহারনামীয় আসামী এবং অজ্ঞাত আসামীরা আমাদের হেয় করার জন্য ও মানহানি করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

ভুক্তভোগী মা-মেয়েকে আইনী সহায়তা দিচ্ছেন ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন। সংস্থাটির সহকারি ডাইরেক্টর মো.শাহ পরাণ চকরিয়া নিউজকে বলেন, এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এই ধরনের ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। এজন্য আমাদের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এইজন্য আমরা একজন আইনজীবি নিয়োগ দিয়েছি। চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ আইনজীবি অ্যাডভোকেট শহিদুল্লাহ চৌধুরী এই মামলাটি পরিচালনা করবেন।

চকরিয়া নিউজকে মামলা নেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো.হাবিবুর রহমান। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, হারবাংয়ে মা-মেয়েসহ পাঁচনকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগী পারভীন আক্তার বাদি হয়ে থানায় একটি এজাহার দেন। ওই এজাহারটি মামলা হিসেবে এন্ট্রি করা হয়েছে। এই মামলায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তারা জেল হাজতে রয়েছে। এই মামলার অন্যতম আসামী চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

প্রসঙ্গত: ২১ আগস্ট শুক্রবার চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে গরু চুরির অপবাদে মা-মেয়েসহ পাঁচজনকে রশি দিয়ে বেঁেধ নির্যাতন করে স্থানীয় লোকজন। পরে তাদের রশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে সড়কে ঘুরিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান পরিষদে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় মারধর করেন।

পরে গরু চুরির অভিযোগে হারবাং ইউনিয়নের বাসিন্দা মাহমুদুল হক শুক্রবার রাতে বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরের দিন শনিবার সকালে আসামীদের আদালতে উপস্থিত করা হলে মামলার প্রেক্ষিতে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন।

এদিকে সোমবার সকালে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজিব কুমার দেব’র কাছে আসামীদের পক্ষে জামিন আবেদন করেন অ্যাডভোকেট ইলিয়াছ আরিফের নেতৃত্বে একদল আইনজীবি। এসময় আদালত পাঁচ আসামীর মধ্যে মা ও দুই মেয়ের জামিন আবেদর মঞ্জুর করেন।

 

পাঠকের মতামত: